জার্মানিতে প্রথম দিনগুলি ১

আমি এর আগে কখনো দেশের বাইরে যাই নাই। জার্মানীর ভিসাই আমার পাসপোর্টের প্রথম ভিসা। এয়ারপোর্টে কি করতে হয় কিভাবে করতে হয় তেমন ধারনাও ছিল না। জিতু অার আমার ভায়রা মেহেদী ভাই সাথে থেকে সবকিছু শেষ করে দিলো। উনাদের সাথে শেষ একটা ছবিও উঠলাম।

এদিকে আশেপাশে থেকে ইমিগ্রেশন সম্পর্কে নেগেটিভ কথাই শুনলাম যেগুলো ভয়ের উদ্রেক করলো। ইমিগ্রেশনে গিয়ে পুরদস্তুর হতাশ হলাম, মানে কিছুই হল না। আমি স্যুট টাই পরে গিয়েছিলাম এজন্যই কিনা কে জানে হাজার হলেও ড্রেসের একটা দাম বাংলাদেশে আছে 😉 জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে ঢুকেছি, ভিতরে ঘুরতে ঘুরতে SCB Signature Lounge খুজে পেলাম ভাবলাম এতদিন ধরে ক্রেডিট কার্ডটা যেহেতু পালছি এটার একটা সুবিধা আদায় করা যাক। ১ টাকা কার্ড থেকে চার্জ করলো বিনিময়ে বুফ্যে! খানাপিনা করে বউয়ের সাথে একটু কথা সেরে নিলাম। এয়ারলাইন্স থেকে আমাকে ৪ ঘন্টা আগে যেতে বলছিল, আমিতো আমজনতা কতসময় লাগে ধারনা নাই সবকিছু দেখি ১ ঘন্টায় শেষ, বাকি সময় এখন বসে বসে পার করা ছাড়া উপায় নাই। দেশের বাইরেও লাউঞ্জ একসেস করবো জন্য Priority Pass ও নিয়ে আসছি। বোর্ডিং শুরু হল বিমানে উঠলাম। দেশের বাইরে প্রথম হলেও বিমানে প্রথম না তাই ভিতরে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকলাম। কাতার এয়ারওয়েজে উইন্ডো সিট নিয়েছি ছবিটবি তুলবো বলে।

বিমানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হল না কিন্তু কাতার পৌছে এয়ারপোর্টে খাবি খেতে লাগলাম। কই যাবো বিষয়টা বুঝতেই পারছিলাম না। পরে ভাবলাম বাকিরা যেদিকে যায় আগে ওদিকে যাই তারপর দেখা যাবে। কাতার এয়ারপোর্ট একটু বেশিই সিকিউর, ট্রানজিটের যাত্রী এয়ারপোর্টে প্রবেশ করার সময়ও চেক করে। একজন কালা চশমা পরিহিত ৬ ফুট কালা ভাই আমার চেকিং করার সময় বাংলাদেশ পুলিশের মত সিরিয়াসনেস দেখাইলো। খুবই দু:খের সাথে লক্ষ্য করলাম উনি আমার এত দামী স্যুট টাই এর কোন প্রকার দাম না দিয়ে নির্মমভাবে চেকিং শেষ করলো। বাসায় সবার মাথা খারাপ হয়ে আছে এটাতো জানা, যোগাযোগ করার পর ইন্টারনেট দরকার আর তার জন্য লাউঞ্জে যাওয়া দরকার। এয়ারপোর্টে পুরো ৪০ মিনিট দৌড়াদৌড়ি করেও লাউঞ্জ আর খুজে পাই না। ইনফরমেশন ডেস্ক থেকে শুনে যায়গামত গিয়ে দেখি লাউঞ্জের কোন চিহ্ন নাই। পরে এক চিপার মধ্যে একটা গোপন লিফট পেলাম যেটা দিয়ে উঠে লাউঞ্জে যাওয়ার রাস্তা পেলাম। এত সুন্দর একটা এয়ারপোর্টের এরকম ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ঠিক পছন্দ হল না। লাইঞ্জে গিয়ে বউরে ফোন দিয়া একগাদা ঝাড়ি খাইলাম! বউ আমার প্লেন Plane Finder দিয়ে প্লেন ট্র্যাক করতেছিল, এখানে নেমে প্লেনের ইঞ্জিন অফ করে দিয়েছে আর প্লেন ট্র্যাকার থেকে হারিয়ে যাওয়ায় উনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বউকে মোটিভেশন দিয়ে ঠান্ডা করার পর খাবারের আইটেম দেখে মাথা নষ্ট জান অস্থির অবস্থা। আমার মত সর্বভূক প্রানীও ঠিকমত খেতে পারলো না, শেষে একটা কোক আর হালকা রুটি খেয়ে বের হয়ে গেলাম। বের হবার পর চিন্তা হল এবার কই যাইতে হবে এবং সেটা জানার জন্য কই যাওয়া যায়(!?) নীচে উল্টোপাল্টা ঘুরোঘুরি করতে করতে দেখলাম একটা ইনফরমেশন ডেস্ক। ওটার কাছে যাইতেই স্টাফ কিছু বলার আগেই আমার বোর্ডিং পাস নিয়ে বলে দিল কত নম্বর গেটে যেতে হবে। কাতার এয়ারপোর্টটা আমার পাবনা শহর থেকেও বড়, ভিতরে ট্রাম আছে, হাটার সুবিধার জন্য Moving Walkway আছে যেটা উপর তলায় না নিয়ে গিয়ে সোজা যেতে থাকে। এয়ারপোর্টের বিশাল আকার মুগ্ধ করার মত। প্লেন উঠার আগের সিকিউরিটি চেকিং এর সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে গেলাম।

দেশে থেকে আসার সময় প্লেনে সব দেশী ভাই ব্রাদার ছিল এবার দেখি সব জার্মান মেড প্রডাক্ট। প্লেনের মধ্যেই জার্মান জার্মান একটা ফিল পেতে থাকলাম। রাতের সাজানো গোছানো কাতারকে আকাশ থেকে দেখতে দেখতে হারায় গেলাম ঘুমের মধ্যে। জার্মানীতে বিমান ল্যান্ডিং করার জন্য বিমান নামানো শুরু করতেই সাজানো গোছানো জার্মানীকে দেখতে পেলাম। উপর থেকে আলোকিত শহরগুলো দেখা যাচ্ছে এবং সেগুলোর কানেক্টিং আউটোবানগুলোও পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে। পুরো অন্ধকারের মধ্যে জ্বলে থাকা শহর এবং রাস্তাঘাটগুলো কোন বড় সার্কিটবোর্ড মনেহচ্ছিল।

ফ্রাংকফুর্ট নামলাম, ইমদাদুল ভাই আগেই বলে দিয়েছিল যে এয়ারপোর্টে ওয়াইফাই আছে ফ্রি আর কত নম্বর বাসে উঠতে হবে সেটাও। আমি নামার পর মনেহল আমিতো আসলাম কিন্তু আমার লাগেজ কই গেল? সবার পিছে পিছে হাটতেছি আর কারে জিজ্ঞাসা করা যায় চিন্তা করতে করতে উপরে লেখা লাগেজ সাইন দিয়ে এগুতে এগুতে একটা জটলার খোঁজ পেয়ে গেলাম। ফ্রাংকফুর্ট এয়ারপোর্টের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স খুবই ভাল। (কাতারেরটাও খুবই ভাল জাস্ট লাউঞ্জ খুজার এক্সপেরিয়েন্সটা বাদ দিলে)। লাগেজের বেল্টের ওখানে দেখি সবাই দাঁড়ায় আছে তো আমিও দাঁড়ায় থাকি। সবাই যে নাটক দেখবে আমিও নাহয় সেটাই দেখলাম 😀 এদিকে একটু পর দেখি লাগেজ একটা গর্ত থেকে উঠে আসতে শুরু করেছে এবং সবাই সেটা তুলে নিচ্ছে। আমি আধাঘন্টা পর আমার লাগেজ খুজে পেলাম কিন্তু কোন হিসাব পাতি ছাড়াই লাগেজ নিয়ে চলে যাচ্ছি দেখে কেউ ব্যাগ নিজের মনে করে অন্যেরটা নিয়ে গেলে কি হতে পারে সেটা ভাবতে ভাবতে বের হয়ে আসলাম।

বাসায় কথাবার্তা বলা শেষ করে বাইরে এসে সব অদ্ভুতুরে লাগতে লাগলো। দেশের বাইরে কখনো যাই নি তাই এয়ারপোর্টের বাইরে এসে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এক জাপানীজরে জিগাইলাম গাড়ি কই থামে ও কইলো ও নাকি প্রথম আসলো জার্মানিতে তাই জানে না। তবে ওকে রিসিভ করার জন্য লোক আসবে তাই ও এগুলা নিয়ে চিন্তায় নাই। আমি কেমনে কি করবো সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে একদিকে হাঁটা ধরলাম। অবশেষে বাস থামার যায়গা খুজে পেলাম ইমদাদুল ভাইয়ের সাথে কথা বলার পর। বাস আসলো আমি বাসে উঠে বসে পরলাম। বাসেও ওয়াইফাই আছে কানেক্ট হয়ে ইমদাদুল ভাইকে জিগাইলাম ভাই বাস ভাড়া কেমনে দিব? উনি তো আকাশ থেকে পড়ে বললো টিকেট কাটেন নাই?

পরের পর্বগুলো এখানে থেকে পরে আসতে পারেন

জার্মানিতে প্রথম দিনগুলি পর্ব ২

জার্মানিতে প্রথম দিনগুলি পর্ব ৩