বাঙালির নাম সমস্যাঃ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে আমাদের পার্থক্য হল, ওদের নাম আর জন্মদিন একটাই কিন্তু আমাদের একটার বেশি হতেই হবে। জন্মদিন তো দুটা কমন ইস্যু এরপর শুরু হয়েছে নাম সমস্যা, নিজের বাড়িতে একটা নাম অফিশিয়াল কাগজপত্রে আরেকটা নাম, আত্বীয় স্বজনের কাগজে আরেকটা আবার যায়গাজমির কাগজে আরেকটা। এতগুলো নাম নিয়ে যন্ত্রনা সাধারন মানুষদের খুব একটা পোহাতে না হলেও সমস্যা হয় যারা দেশের বাইরে যান বা অনেক অফিশিয়াল কাজকর্ম করতে হয়। যারা এই সমস্যায় পরেছেন তারাই জানেন এটা কত বিরক্তিকর আর কষ্টদায়ক। আজকে আমি এরকম কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করবো এবং কিভাবে ভবিষৎতে এই সমস্যা থেকে দুরে থাকে যায় সে ব্যাপারে কিছু পরামর্শ দিবো।
পাসপোর্টে Md কি Mohammad করে দিতে হবে?
প্রথমেই চলুন দেখি পাসপোর্ট ফর্মে কি দেয়া আছে, এখানে লিখা নামের পূর্নরুপ লেখা বাঞ্ছনীয় যার অর্থ “কাম্য”। এটার অর্থ কোনাভাবেই “বাধ্যতামূলক” নয়, অনেকেই ভূল বুঝে পাসপোর্টে নামটা আরেকরকম বানিয়ে ফেলেন। এখন পাসপোর্টে নাম পরিবর্তন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তাই ভুলেও এরকম করতে যাবেন না। আপনার শিক্ষগত সনদে যা আছে সেটাই সবখানে ব্যাবহার করবেন।
নামের মধ্যে ডট (.) থাকা
আমাদের অনেকের নামেই Md., AKM. S.M. এর মত অংশ থাকে, নামের মধ্যে ডট(.) ব্যবহারের এই সুযোগ বাংলাদেশে এখনো অনেক যায়গায় রয়েছে যেমন মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক রেজিস্ট্রেশনে। একজনময় ডাচ বাংলা ব্যাংক ডট(.) লেখা অনুমোদন করলেও এখন কোন ব্যাংকই নামে ডট(.) অনোমোদন করে না, তবে এটা কোন সমস্যা না। সবাই ডট(.) সহ এবং ব্যাতীত একই নাম হিসেবেই ধরে। ব্যাংকগুলোতে যেখানে নামের প্রতিটি অংশ মিলতে হয় সেখানে ডট এর পার্থক্যকে ভিন্ন হিসেবে ধরা হয় না। ডট জনিত ব্যাপারে আমার ইন্টারন্যাশনাল ট্র্যানজেকশনেও কোন সমস্যা হয় নি। তবে যদি ডট(.) বাদ দিলে নামের দুটি অংশ একটি অংশে পরিনত হয় তাহলে আমার পরামর্শ থাকবে সেখানে একটি স্পেস দিয়ে দেয়ার জন্য। যেমন Md.Asif এভাবে থাকলে ডট মুছে দিলে তা হবে MdAsif যা বুঝতে সমস্যার সৃষ্টি করবে। মাঝে একটি স্পেস দিয়ে দিলে এ সমস্যা আর থাকবে না। ভাল হয় যদি ছোটবেলা থেকেই ডট ব্যাবহার না করা যেহেতু এটার স্বীকৃতি নেই বেশিরভাগক্ষেত্রেই।
বাবা মারা গিয়েছেন, এটাকে নামের অংশ বানিয়ে ফেলা (Late/মৃত)
কেউ মারা গেলে সে যে মৃত সেটা তার নামের অংশ না, তাই নাম লেখার আগে Late লেখার কোন দরকার নাই। কেউ মৃত বা জীবিত জানার দরকার হলে এমনিতেই ফর্মে আলাদা ফিল্ড থাকবে।
কোনটা অংশটা Firstname হবে আর কোনটা Last Name হবে?
আমার সাজেশন নামের প্রথমে যদি সংক্ষিপ্ত রুপ থাকে তাহলে অবশ্যই সংক্ষিপ্ত রুপের পরবর্তী অংশসহ ফার্সটনেম করুন যেমন আমার নাম Md Asif Nawaz আমার ফার্সটনেম Md Asif. আমার মতে এটা বেস্ট। এর পেছনে একটা যুক্তি উপস্থাপন করছি। আপনি যদি শুধু Md কে ফার্সটনেম করেন তাহলে আপনাকে দেশের বাইরে সবাই Md বলে ডাকা শুরু করবে, মেইলের নামের অংশে Md বলে ডাকবে এমনকি চিঠিপত্রেও তাই হবে। খুবই পেইনফুল হবে ব্যাপারটা। নামের শেষ অংশ এক শব্দ থাকলেই বরং বেশি ভাল লাগে আমার, সম্ভব না হলে আলাদা বিষয়।
পাসপোর্ট অফিসে ঝামেলা করলে?
কোন ঝামেলার সুযোগ নাই, সাথে করে সার্টিফিকেট নিয়ে যাবেন, বলবেন সার্টিফিকেটে যেভাবে আছে সেভাবেই দিতে হবে।
বাবার নামের বানান বাবার পেপার্সে একরকম আমার পেপার্সে আরেকরকম এখন?
এটা আপাতত বিদেশ ভ্রমনে বা দেশী কোন কাজে সমস্যা করবে না তবে এরকম ঝামেলা রাখা ঠিক নয়, ভবিষৎতে দেশের বাইরে বাবা মাকে স্পন্সর করতে সমস্যা হতে পারে। সময় থাকতে সংশোধন করে নেয়া উচিত।
সিগনেচার বাংলায় নাকি ইংরেজীতে?
উইকিপিডিয়া অনুসারে সিগনেচার হল হাতে লেখা একটি শিল্পবিশেষ যাতে কারও নাম, ডাকনাম অথবা কোন চিহ্ন থাকে এবং যা কোন কাগজে ওই মানুষের পরিচয়ের প্রমান হিসেবে ব্যাবহার হয়।
দেখুন এখানে কোন নির্দিষ্ট ভাষায় হতে হবে এমন কিছু বলা নেই। আপনি চাইলে সূর্য বা চাঁদের ছবিও একে দিতে পারেন। যে কোন চিহ্ন বা যে কোন ভাষায় লেখা আপনার সাক্ষর হিসেবে গ্রহনযোগ্য। আমার পরামর্শ থাকবে সাক্ষর বা সিগনেচার সবসময় একরকম ব্যাবহার করুন, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং অন্যন্য যায়গায় যেন একই রকম হয়। এখন অনেক যায়গাতেই জাতীয় পরিচয়পত্রের অবিকল সিগনেচার দিতে বলে যেমন ব্যাংকে, যদি সিগনেচারটা খুবই সহজ হয় তাহলে তা জালিয়াতি হওয়ার সুযোগ থাকে। পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য, দেশের বাইরেও পাসপোর্টে থাকা সাক্ষরের অবিকল সাক্ষর ব্যাবহার করতে হয়। আরেকটা পরামর্শ থাকবে সাক্ষর বা সিগনেচার যেন একটু জটিল হয় যেন কেউ সহজে নকল করতে না পারে।
আরও একটি প্রাসঙ্গিক পোষ্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পরিপেক্ষিতে নামের সমস্যার উপরে লেখা।
Md vs. Mohammad – বিভ্রান্তি এড়াতে কৌশলী হোন
আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন থাকে, কমেন্টে জিজ্ঞাসা করতে পারেন আমি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ 🙂