পোল্যান্ড সীমান্ত এবং জার্মান পুলিশ

গত পরশু (০৭-০১-২০২৩) Tarikur ভাইরে নিয়া ঘুরতে গিয়েছিলাম পোল্যান্ডে। বর্ডার পার হয়ে একটা মার্কেটে ঘুরোঘুরি করলাম। প্রায় বাংলাদেশের দামে অকটেন কিনে গাড়ি লোড করলাম। এখানে দেখি ওখানে কন্টেইনার পাওয়া যায় অতিরিক্ত তেল নেয়ার জন্য। দুইটা ২০ লিটারের বোতল কিনে গাড়িতে তুলে ভাবলাম পোল্যান্ডের একটু ভেতরে ঘুরে আসা যাক। মার্কেট থেকে বের হয়ে দেখি মোর ঘোরা যাবে না। মোর নিতে আরও সামনে যেত হবে। মোর ঘুরতে গিয়ে আবার ঢুকে গেলাম জার্মানিতে তারপর আবার পোল্যান্ডে ফেরত আসলাম। ভেতরে হয়তো ২০ কিলৌমিটার গিয়েছিলাম এরপর আবার বর্ডার ক্রস করে জার্মানিতে ব্যাক। কিন্তু তারপরই শুরু হল আসল ঘটনা।

জার্মানিতে ঢোকার পর হয়তো ১০ কিলোমিটার গিয়েছি হঠাত দেখি একটা পুলিশের গাড়ি কিছূটা টেইলগেটিং করতেছে। রাস্তায় স্পিড লিমিট ১০০ থাকলেও রিল্যাক্সে চালাবো বলে আমি ৭০-৮০ তে রেখেছিলাম। সুযোগ পেয়ে গাড়িটা টান দিয়ে আমার সামনে গেল এবং পেছনে ইলেকট্রিক সাইনবোর্ডে লেখা উঠলো “bitte folgen” যার অর্থ “Please follow”। আমার হঠাৎ ভয় হইলো তেল কি লিমিটের অতিরিক্ত নিয়েছি কিনা। কারন ওখানে ২০ লিটারের বেশি কোন কন্টেইনার নাই।

আমি প্রথমে নিশ্চিত ছিলাম না যে সত্যি দেখছি কিনা। ৫ বছর জার্মানিতে থেকে কখনো পুলিশ আমাকে কিছু বলে নি তাই মাথায় আসছিল না। তারিকুর ভাইরে বললাম ভাই ঘটনা কি সত্যি? নাকি ভুল কইরা দিছে? উনি বলে মিয়া লেখা দেখতেছেন ফলো করেন সত্যি না আবার কি। কিন্তু আমার তো মাথা কাজ করে না এদিকে বুকের মধ্যে ঢাপুর ঢুপুর। তারিকুর ভাই বুঝতে পেরেছিল যে আমি নার্ভাস ফিল করতেছি। উনি বারবার বলছিল একদম চিন্তা করবেন না, আপনার গাড়িতে তো কোন অবৈধ জিনিস নাই টেনশন করার তো কোন মানে নাই। কিন্তু পুলিশ জিনিসটা তো আমরা টেনশনেরই জিনিস হিসেবে ধরে রাখি তাই যতই নিজেরে বুঝ দেই সেটা কাজ করতে চায় না। আমাদের কাছে কিছু না থাকলেও তো অনেক সময় দেশে পকেট থেকে এটা ওটা বের হয়ে আসে।

আরেকটা ব্যাপার বুঝছিলাম না যে পুলিশের গাড়ি এভাবে যাচ্ছে কেন, একটু আস্তেধীরে তো যাবে না সে দেখি আমার থেকে জোরে যাচ্ছে। পরে আমিও গতি বাড়ালাম এবং পেছনে যেতে থাকলাম। কিছুদুর যাবার পর গাড়িটা পাশে একটা কাচা রাস্তায় উঠিয় গেল। তখন বুঝে গেলাম টার্গেট আমিই। আমিও গেলাম এবং পেছনে পার্ক করলাম।

গাড়ির দরজা খুলে বের হতে গেলাম বললো ভেতরে থাকো। এইটা অবশ্য ভাল যে আমাকে দাড়ায়ে সম্মান টম্মানের কিছু নাই। আমি বসে থাকবো ও যা বলার জানালা দিয়েই বলবে। জিজ্ঞাসা করলে জার্মান পারি নাকি। বললাম ইংরেজী বললে ভাল হয়। বললো ওরা বর্ডার সিকিউরিটির দায়িত্বে আছে Passport, Driving license, Residence permit সবকিছু দাও। ভাগ্য ভাল এগুলো সব নিয়ে আসছিলাম যদিও আগে খনো লাগে নাই।

ফোনে ডকুমেন্টের কিসব চেক করলো বুঝলাম না। কি করি কই থাকি এগুলো জিজ্ঞাসা করার পর বললো বাহিরে আসো গাড়ির পেছনে চেক করবো। এবার ধরেই নিয়েছি তেলের জন্য মনেহয় জরিমানা হবে ভালমত। কিন্তু না ওরা কি যেন খুঁজতেছে। এসব তেলটেল ওদের আর্কর্ষন না। খোঁজার স্টাইলও স্বাভাবিক না। একভাবে গাড়ির ভেতরে তাকিয়ে আছে যেন ওরা নিশ্চিত এখানে একটা বড় অগ্নেআস্ত্র থাকার কথা ছিল কিন্তু এখন দেখতেছে নাই। একজন ওদের গাড়ির মধ্যে ফেরত গিয়ে মনেহল কন্ট্রোল সেন্টারের সাথে কথা বললো। আমরা বুঝতে পারলাম ওরা সস্তুষ্ট হতে পারছে না।

গাড়ির মধ্যে আইপ্যাডসহ ছোট একটা ব্যাগ ছিল। ওটা দেখলো আর পেছনে একটা পলিথিনের ব্যাগে গাড়ির কিছু টুলস ছিল ওটা। তারপর ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেল।

এবার আমরা বসলাম এনালাইসিস করতে কেমনে কি হইলো। ঘটনা পর্যবেক্ষন করে মনেহল আমাকে সন্দেহ করেছে কোন সিসিটিভি থেকে অথবা কেউ তাদের তথ্য দিয়েছে কোন গাড়ি সম্পর্কে যা আমাদের সাথে মিলে। কিন্তু কোনভাবেই এর বেশি আইডিয়া করতে পারলাম না। অল্পসময়ের মধ্যে দুবার বর্ডার পার হয়ে এদিকে ওদিকে যাওয়াটাও সন্দেহের কারন হতে পারে। বর্ডার এলাকাতে আমি কোন পুলিশের এক্টিভিটিও দেখি নি। এদিকে বর্ডার এমন যে পার হয়ে গেলেও টের পাওয়া যায় না আরেকটা দেশে চলে আসলাম। আপাতত কাকতালীয়ই মনেহচ্ছে।

বেশ টেনশনের উদ্রেগ করেছিল বটে।