আমার বাবা হওয়া, পর্ব – ১ 🐣

বাবা হওয়া অনেক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি বড় অধ্যায়। ভুলভাল করলে পরিস্থিতি ভয়ানক হতে পারে। এর আগে একবার হাসপাতালে স্বল্পসময়ের জন্য ভর্তি হওয়া এবং অনেকবার ডাক্তারের সাথে সাক্ষাতকারের সূত্রে জার্মান সাস্থ্যসেবার উপরে আমার আস্থা ছিল আগে থেকেই। এরা খুব পেশাদারী মনোভাব নিয়ে কাজ করে। তৈলমর্দন করবে না বিধায় মাঝে মাঝে এদের নির্মম মনেহতে পারে। যেমন ধরেন হাসপাতালে প্রটোকল অনুযায়ী সেবা দিবে আপনাকে। আপনার ধরেন পা ভেঙ্গে ঝুলতেছে দেখা যাবে আপনাকে জরুরী অবস্থা পরীক্ষা করে বসিয়ে রাখলো ২ ঘন্টা। জরুরী সবথেকে বেশি যার সেই আগে সুবিধা পাবে কে নবাবের বেটা আর কে হোমলেস এটা দেখার বিষয় না।

একজন ফার্মাসিস্ট

আমার স্ত্রী অন্তসত্তা হয় গতবছরের জুলাইতে। আমি মাঝে এক বড় ভাইয়ের (ডাক্তার) সাথে কথা বলেছিলাম উনি বলেছিলেন যেন দুটো ভিন্ন কম্পানির Pregnancy Checker ব্যাবহার করি প্রেগন্যান্সির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। দেশে আসলে এটাই ফলো করে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে। এখানে এই চেকারের দাম ১২ ইউরোর মত যা দু-তিন বেলা ভিয়েতনামিজ পেটপুরে খাওয়ার খরচ। এর আগে দুবার চেক করে ধরা খেয়েছি তাই ২৪ ইউরো খরচ করতে খুব একটা মন সায় দিচ্ছিল না কিন্তু কি করার ডাক্তারবাবু যা বলবেন তা তো পালনীয়। আমি এবার একটা কিনলাম দেখার জন্য কি হয়। টেস্ট করে পজিটিভ পেলাম তখন অন্য আরেকটা প্রতিষ্ঠানের চেকার দিয়ে পরীক্ষা করার জন্য আগ্রহী হলাম।

এখানে বলে রাখি এখানে স্থানীয় যায়গায় দয়া করে ইংরেজীতে সার্ভিস দিলেই আমাদের চোখে তিনি অনেক ভালমানুষ। বার্লিন কেন্দ্রের দিকে ব্যাতিত অন্যকোথাও কেউ ইংরেজী বলবে আমরা সেরকম আশা করি না সাধারনত।

বাসার পাশে ফার্মেসি দোকানে গিয়ে জার্মানে বললাম একটা Schwangerschaftsprüfer (চেকার) দাও। আমাকে আগে যেটা ব্যাবহার করেছিলাম সেই একই জিনিস আরেকটা ধরিয়ে দিলো। আমি বললাম এইটা হবে না অন্য কোন কম্পানিরটা দাও। এবারতো আমার জার্মান ধরা খেয়ে গেল, কি কি বললো সব মাথার দুহাত উপর দিয়ে গেল। জিজ্ঞাসা করলাম ইংরেজী বলে কিনা। বাহ সুন্দর ইংরেজী বলে। সে জানতে চাইলো অন্যটা দিয়ে কি করবো এটাতো অনেক ভাল। আমি বললাম যে আসলে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হবার জন্য ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেকার দিয়ে পরীক্ষা করতে চাচ্ছি। ও বললো আমরা একটা চেকার ব্যাবহার করে পজিটিভ পেয়েছি কিনা আমি হ্যা সূচক জানানোর পর তার হাতে থাকা চেকারটা যায়গামত সাজিয়ে রেখে বললো তোমাদের আর কোন চেকার লাগবে না। যেহেতু পজিটিভ পেয়েছ তার অর্থ পজিটিভ। আমিতো মনে মনে ভাবি আরে আমি কি ফ্রিতে চাইতেছি নাকি আজিব 😕

আমি একটু নাছোরবান্দা শুধু শুধু ডাক্তারের কাছে যেয়ে একদিন অফিসের কাজের বারোটা না বাজিয়ে আরেকটাবার চেক করে দেখলে ভাল হয়। এমনিতেই নতুন চাকরিতে মাত্র একমাস হয়েছে। ফার্মাসিস্ট সমস্ত কাজ বাদ দিয়ে হাসিমুখে আমাদের কয়েক মিনিট হবে বুঝালো যে এই টেস্টার কিভাবে কাজ করে, কতটা নিঁখুত তার কাজ। এটা নাকি ৪-৫ দিনের প্রেগন্যান্সিও সনাক্ত করে ফেলে। আমাদের অতিরিক্ত টাকা ব্যায় করার কেন কোন প্রয়োজন নেই। এখন আমাদের গাইনী ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত এবং আমাদের অনাগত বাচ্চার জন্য শুভকামনা জানালো। আমাদের বাঙালি মন কিছুতেই বুঝতে পারলো না জিনিসপত্র বিক্রি বাদ দিয়ে দোকানদার আমাদের টাকা বাঁচানোর জন্য এত পকপক করলো?

ডাক্তারবাড়ি যাওয়া

উত্তেজনায় আমাদের যে দিনই যাচ্ছে না, দেখা করার সময় কদিন পর, ওদিকে মিশুর উপসর্গ দেখে মনেহচ্ছে এবার বাবা হতেই চলেছি।

অবশেষে ডাক্তারবাড়ি যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসলো যাওয়ার পথে মিশুকে ভয় দেখাচ্ছি, এখানকার ডাক্তারটা কিন্তু সেরকম এগ্রেসিভ। রক্ত পরীক্ষা করবে সনোগ্রাফি করবে এটা করবে ওটা করবে…। একবার ওদের কাছে গেলে রক্ষা নাই। বেচারা ভয়ে অস্থির। আবার সাহসও দিচ্ছি বেঁকে বসলে দেখা যাবে ডাক্তারের কাছে যাবে না জেদ ধরে বসতে পারে।

ডাক্তার সাহেবান বৃদ্ধা মানুষ। গলার স্বর ভারী এবং খাঁটি জার্মান টান। আমরা ভাবলাম উনি মনেহয় ট্রেডিশনালভাবে পরীক্ষা করবেন। আমার জানামতে দেশে সেভাবেই করে। কিন্তু না উনি সেরকম একটা এগ্রেসিভ লুক নিয়ে মিশুকে সনোগাফির বেডে শুয়ে পরতে বললো।

আমরা একে অপরের দিকে তাকাতাকি করলাম। আমি আসলে আশাকরি নাই আজকে সেরকম পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আমার মুখ ফ্যাকাশে হলেও একটু হাসি ধরে রেখে সাহস দিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকিয়ে দিলাম। মিশু তো ভয়ে অস্থির মনেহচ্ছে সনোগ্রাফি কি বা কি জিনিস আজকেই মনেহয় কাটাকুটা শুরু করবে। কিছু বোঝার আগেই দেয়ালে থাকা বড় পর্দায় এক ইঞ্চি সাইজের আমার কুট্টুনি আব্বুর ছবি দেখতে পেলাম 🥰। ডাক্তার কনগ্রাচুলেশন জানালো সাথে একটা ছবি মুদ্রন করে হাতে ধরায় দিলো। আমিও ফোন দিয়ে ভিডিও করে নিলাম নব্য ভ্রুনের 🐣।
আসার পথে মিশু একগাদা ঝাড়ি দিলো আমি বলাতেই নাকি ডাক্তার রক্তসহ অন্যন্য ব্যাথাময় পরীক্ষাগুলো করছে। আমি না বললে যেন কিছুই হত না মাথায় হাত বুলিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিতো 😒।