আপনি যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন এবং বাংলাদেশ থেকে আপনার বিবাহিত সঙ্গীকে জার্মানি নিয়ে আসতে চান তাহলে এই পোষ্ট আপনার জন্য। আমি ২০১৮ এর জানুয়ারীর শেষের দিকে জার্মানিতে আসি এবং তারপর আমার স্ত্রীকে নিয়ে আসি। পুরো প্রসেসটা এই পোষ্টে বলার চেষ্টা করবো।
কিছু ফ্যাক্ট এবং নিয়ম
- আপনার Aufenthaltstitel যদি “Blau Karte” ক্যাটাগোরীর হয়ে থাকে তাহলে আপনার জন্য সঙ্গী আনা সবথেকে সোজা।
- আপনি যদি ছাত্র হয়ে থাকেন তাহলে জার্মানিতে আসার আগে যদি বিয়ে করে থাকেন তাহলে বিষয়টা তুলনামুলক সোজা।
- আপনি যদি ছাত্র হয়ে থাকেন এবং জার্মানি আসার পর দেশে গিয়ে বিয়ে করেন তাহলে বিষয়টা একটু জটিল। ভিসা রিজেক্ট হবার সম্ভাবনা থাকে এক্ষেত্রে তবে চেষ্টা করতে হবে।
- যদি আপনি ছাত্র হয়ে থাকেন তাহলে চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব বড় সিটিতে এপ্লাই করার। দরকারে পার্শবর্তী বড় সিটিতে গিয়ে এড্রেস রেজিস্ট্রেশন করে তারপর চেষ্টা করতে পারেন। এটার কারন হল বড় সিটিতে Ausländerbehörde এর কর্মকর্তাদের মন মানসিকতাও বড় থাকে।
প্রথম কাজ এপয়েন্টমেন্ট নেয়া
Family Reunion Visa এর জন্য এমবেসিতে সাক্ষাৎকারের জন্য এপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে, এপয়েন্টমেন্ট নিতে এখানে ক্লিক করুন।
কাগজপত্র যা যা লাগবে
পুরো কাগজের অফিশিয়াল তালিকা পাবেন এখানে। তবে সব কাগজপত্র লাগে না বা দিতে হয় না। পরিস্থিতির সাপেক্ষে কাগজপত্রের তালিকা হালকা ছোটবড় হয়। আমি নিজে বিষয়টা বিশ্লেষন করে বলার চেষ্টা করছি।
- Valid passport : পাসপোর্টের মেয়াদ সর্বনিম্ন ১২ মাস থাকতে হবে, সতর্কতা হিসেবে আরেকটু বেশি রাখুন নাহলে পরে নতুন পাসপোর্ট বের করতে প্রচুর ঝামেলা পোহাতে হবে এবং পুরো প্রসেসটাই বিলম্বিত হবে।
- Photographs (3 Copy): ফটো লাগবে ৩ কপি, এগুলোর সাইজ হবে ৩৫ মিমি এবং ৪৫ মিমি সাইজের। জার্মানির অফিশিয়াল ছবির নিয়মানুসারে হতে হবে ছবিগুলো। ভাল স্টুডিওতে সাধানরতো তারা জার্মান অনুমদিত ছবির বৈশিষ্টগুলো জানে। একটা আদর্শ ছবির উদাহারন দেখুন এখানে।
- Visa Form (2 Set): ভিসার ফর্ম লাগবে দুই সেট, এখানে থেকে অনলাইনে পুরন করতে পারেন অথবা PDF ডাউনলোড করে পুরন করতে পারেন। আমি ডাউনলোড করে পুরন করতেই পছন্দ করি কারন তাহলে সংশোধন করার যথেষ্টা সুযোগ পাওয়া যায়। এই মুহুর্তে PDF টার লিংক খুঁজে পাচ্ছি না পেলে এখানে সংযুক্ত করে দিবো। জার্মান দুতাবাসের এই অংশটুকু খেয়াল লাখবেন পুরন করার সময় (please make sure that both forms are filled out and signed mentioning especially the address of your future residence in Germany (question 15) as well as your complete home address which includes telephone number and e-mail address in Bangladesh)
- Signed Declaration on True and Complete Information (2 Copy): ফর্মের সাথে একটা অতিরিক্ত কাগজ থাকে, আপনি যে সব তথ্য সঠিক দিয়েছেন সেটা ডিক্লেয়ার করার জন্য সাইন করতে হয়।
- Copy of your passport’s data page (2 Copy): পাসপোর্ট ডাটা পেজের (যেখানে ছবি এবং নাম ঠিকানা থাকে) তার ফটোকপি।
- Birth certificate (2 Copy): জন্ম নিবন্ধনে থাকা নাম পিতার নাম, মাতার নাম যেন পাসপোর্টের সাথে সঙ্গতিপূর্ন হয় তা খেয়াল রাখুন, দরকারে সংশোধন করে নিন, স্থায়ীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন অফিসে সামান্য ফি এর বিনিময়ে সংশোধন করতে পারবেন।
- Applicant’s relative’s passport (1 Set): আপনার সঙ্গী যিনি জার্মানিতে থাকেন তার পুরো পাসপোর্টের ফটোকপি, খালি পেজ এবং ভিসার পেজ সহ। যদি আগের পাসপোর্ট থেকে থাকে তাহলে বিয়ের দিন যে পাসপোর্ট চালু ছিল সেটা এবং তার পরের সবগুলোই ফটোকপি করতে হবে।
- Registration certificate (2 Set): আপনার সঙ্গীর এড্রেস রেজিস্ট্রেশনের ফটোকপি। যাকে “Meldebescheinigung” বলে।
- Aufenthaltstitel (2 Set Copy): আপনার সঙ্গীর রেসিডেন্স পারমিটের ২ কপি ফটোকপি A4 পেজে।
- Marriage certificate: ম্যারেজ সার্টিফিকেট (ইংরেজী), নিকাহনামা বাংলায় এবং ইংরেজীতে অরিজিনাল কপি এবং সাথে দুই কপি ফটোকপি।
- Certificate of German proficiency (Original + 2 copy): আপনার সঙ্গীর Aufenthaltstitel বা Residence Permit “Blau Karte” শ্রেণীর হয়ে থাকে তাহলে আপনার ভাষাগত কোন দক্ষতা দেখাতে হবে না, না হলে আপনাকে A1 কোর্স করে আসতে হবে। A1 খুবই বেসিক কোর্স তাই খুব সহযেই করে ফেলা সম্ভব। ঢাকাতে এই কোর্স করার জন্য গোথে ইন্সটিটিউজ ধানমন্ডিতে যেতে পারেন।
- Lease agreement (1 Set Copy): আপনার সঙ্গীর বাসা ভাড়ার চুক্তিপত্র। বাসায় অবশ্যই দুজন থাকার অনুমতি থাকতে হবে। তবে দেশে এপ্লাই করার জন্য তা না থাকলেও চলবে। এখানে কাগজপত্র আসার আগে আগে দুজন থাকার মত বাসা নিয়ে নিতে হবে। যদি বাসা পেতে দেরী হয় তাহলে Ausländerbehörde থেকে ডাকলে বুঝিয়ে বললেই হবে, ভিসা বাতিল হবার মত কারন এটা না। তবে প্রসেস দীর্ঘায়িত হবে।
- Evidence of income (2 Copy): জার্মানিতে থাকা আপনার সঙ্গীর ৩ মাসের স্যালারী সার্টিফিকেট দিতে হবে। যদি চাকরি না থাকে যেমন তিনি যদি ছাত্র হন সেক্ষেত্রে ব্লক একাউন্ট করতে হবে। ব্লক একাউন্টের নিয়ম বিষয়ে আমি বিস্তারিত এখনো পরিষ্কার না, পরে তথ্য সংযুক্ত করার চেষ্টা করবো। বিস্তারিত জানতে Ausländerbehörde তে কথা বলে আসতে পারেন।
- Sketch map: স্কেচ ম্যাপ একে দিতে হবে আপনার বর্তমান, স্থায়ী ঠিকানা এবং কাজী অফিসের। গুগল ম্যাপ গ্রহনযোগ্য না তবে গুগল ম্যাপ দেখে বা ট্রেসিং করে আঁকাতে পারেন, খুব নিখুঁত হওয়ার দরকার নাই। বাস স্টপেজ থেকে বাসা পর্যন্ত রাস্তাঘাট একে বুঝিয়ে দিলেই হবে। উল্লেখ্য বহুল পরিচিত ল্যান্ডমার্কগুলো ম্যাপে মার্ক করে দিবেন যেন বাসা খুজে পেতে সুবিধা হয়। এই ম্যাপ দেখেই একজন আপনার ঠিকানায় খোজ করতে আসবে তাই বোধগম্য হওয়া চাই।
- Family Picture: বিয়ের ছবি এবং পারিবারিক ছবি দিতে হবে, যেসব ছবিতে আপনারা আছেন, যেমন মেয়ের বাবা মায়ের সাথে ছেলের ছবি এবং ছেলের বাবা মায়ের সাথে মেয়ের ছবি। যাদের বিয়ে বাসায় অনুমোদিত না সেক্ষেত্রে যেটুকু সম্ভব সেটুকু দিবেন বাকিটুকু সাক্ষাৎকারনের সময় দুতাবাসের কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে বলবেন। পরে বিয়ে ভেরিফিকেশন ফেইল হলে সমস্যা তাই আগেই তাদের বলবেন। উদাহারনস্বরুপ: আমার বাসায় বিয়ে মেনে নেয় নাই।
- Divorce Papers/Death Certificate (Original with 2 Copy): পূর্বে যদি বিয়ে হয়ে থাকে তাহলে ডিভোর্স পেপার বা সঙ্গীর ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে যেতে হবে।
- Travel Insurance: এটা করতে পারবেন এই লিংকে থাকা কম্পানিগুলো থেকে। করতে আধা ঘন্টার মত সময় লাগে, পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে যাবেন সাথে করে।
ব্যাস আপনি রেডি, এবার প্রস্তুতি নিন সাক্ষাৎকারের এর, সাক্ষাৎকারের সময় আত্ববিস্বাসী থাকুন। অনেক সময় ভিসা কর্মকর্তা উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করে আপনাকে পরীক্ষা করতে চাইবে সেক্ষেত্রে সঠিকটা বলে দিন। বিচলিত হবার কোন কারন নাই। জার্মান এমবেসির ভিসা রিজেক্ট করার হার কম তাই চিন্তা না করে ভালভাবে প্রস্তুত হয়ে যান।
ভিসার সাক্ষাৎকারের পর
যদি আরও কোন কাগজপত্র ভিসা কর্মকর্তা চায় তাহলে আপনাকে লিখে দিবে আপনি সেগুলো খামে ভরে এমবেসি গেটে দিয়ে আসবেন। খামের উপরে অবশ্যই আপনার ফাইল নম্বর লিখবেন। কাগজপত্র যেটাই দেন অবশ্যই ২ কপি দিবেন।
সাক্ষাৎকারের পর ম্যারেজ ভেরিফিকেশন হবে, এটা ২ মাস বা তার বেশিও লাগতে পারে, অনেকক্ষেত্রে ৭ দিনেও হয়ে যায় তবে সেটা সাধারন ঘটনা না। এটা হয়ে গেলে তারা কাগজপত্র জার্মানিতে পাঠিয়ে দিবে। ভিসা দেয়া হয় আসলে জার্মানি থেকে। আপনার সঙ্গী যে এলাকায় থাকেন সেই এলাকার কর্তৃপক্ষ ভিসার সিদ্ধান্ত নেয়। আপনার সঙ্গীকে তারা ডেকে পাঠাতে পারে আবার নাও পারে। আমি যখন ডার্মস্ট্যাডে ছিল তখন আমাকে তারা চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছিল, আমার বন্ধুকে মুনস্টারেও ডেকে পাঠিয়েছিল তবে বার্লিনে সাধারনতো ডাকে না। যদি ডাকে তাহলে কি কি কাগজপত্র নিয়ে যেতে হবে তার তালিকা দিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে কিছু কাগজপত্র সত্যায়ন করে নিয়ে যেতে বলে বাড়িওয়ালার থেকে/বুর্গারআমট থেকে। এই স্টেপটা সফলভাবে হয়ে গেলে দ্রুতই ভিসা আশা করতে পারেন।
ধন্যবাদ মনযোগ দিয়ে পড়ার জন্য, আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে কমেন্টে জানাতে পারেন আমি উত্তর দেবার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আমার জন্য দোয়া করবেন 🙂