IT পেশাজীবিদের জন্য একটি আদর্শ সিভি ডেভলপ করা

CV জিনিসটা কি?

CV একটি সংক্ষিপ্ত রুপ, এর পূর্নরুপ হল Curriculum Vitae. আমরা মোটামুটি সবাই বায়োডাটা সম্পর্কে জানি। বায়োডাটা হল মুলত একজনের নিজস্ব ব্যাক্তিগত তথ্য সমৃদ্ধ কাগজ। সিভি বা কারিকুলাম ভিটা হল আপনার দক্ষতা এবং যোগ্যতার সর্বপরি পেশা সম্পর্কিত বিষয়ের সমৃদ্ধ কাগজ। এখানে ব্যাক্তিগত তথ্যও থাকবে তবে পরিমানে কম। এই পোষ্টে আমি একজন IT পেশাজীবিদের জন্য একটি সুন্দর সিভি ডেভলপ করতে কি কি করতে হবে তার একটা পথনির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করবো।

চলুন দেখি উইকিপিডিয়া কি বলছে সিভির সংজ্ঞায়

curriculum vitae (often shortened CVrésumé or vita) is a written overview of a person’s experience and other qualifications for a job opportunity. It is akin to a résumé in North America. In some countries, a CV is typically the first item that a potential employer encounters regarding the job seeker and is typically used to screen applicants, often followed by an interview.

উইকি অনুসারে, সিভি হল একজন চাকুরীপ্রার্থীর যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার একটি লিখিত বর্ননা এবং একজন চাকুরী আবেদনকারী এবং চাকরিদাতার মধ্যকার প্রথম যোগাযোগের মাধ্যম। এখানে বোঝা যাচ্চে যে একটি সিভি আপনাকে ইন্টারভিউ এর টেবিলে নিয়ে আসতে মুল ভূমিকা রাখবে। তাই অবশ্যই একটি সিভি খুবই গুরুত্বসহকারে এবং ভালভাবে তৈরি ডেভলপ হবে।

বায়োডাটা দিলে সমস্যা কি?

বায়োডাটাতে থাকে আপনার ব্যাক্তিগত বিষয়গুলো। আপনার উচ্চতা, রক্তের গ্রুপ ইত্যাদি এর মধ্যে থাকবে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে চাকুরির আবেদনে এসব ব্যাক্তিগত তথ্য চাওয়া বা দেয়ার নিষেধাজ্ঞাও আছে। উচ্চতা, ওজন এগুলো হয়তো সেনাবাহিনীর চাকুরিতে চাইতে পারে কিন্তু সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারের চাকুরিতে চাওয়া প্রায় অসম্ভব তাই বায়োডাটা দিয়ে আমাদের উদ্দেশ্য পূরন হবে না।

সিভি কেন ভাল হতে হবে?

CV হল এমপ্লয়ারকে কনভিন্স করার প্রথম ধাপ, এই ধাপের উপরে নির্ভর করছে আপনি ইন্টারভিউতে ডাক পাবেন কি না। সিভি পছন্দ না হলে সেটা ময়লার বাক্সে চলে যাবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই।

একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে, একজন সিভি বাছাইকারী গড়ে ৬ সেকেন্ড সময় নেন একটি সিভি দেখতে। খুবই কম সময়, এ সময়ে খুব বেশি কিছু পড়াও সম্ভব না। আপনার প্রথম যুদ্ধ হল এই ৬ সেকেন্ড টিকে থাকা এবং তাকে বাধ্য করা কমপক্ষে আরও ৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে আপনার বাকি সিভিটা পড়তে।

সিভি এবং রিজুমিতে কি কি থাকা উচিত

CV হল আপনার শিক্ষাগত এবং ব্যাবহারিক যোগ্যতা/অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরন। এখানে সবকিছু একটু ডিটেইলে থাকবে এবং সিভি ২ পৃষ্ঠার হতে পারে। এর বেশি বড় করা উচিৎ নয় তবে যারা অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তাদের জন্য বেশি হতে পারে।

অন্যদিকে রিজুমি হল সিভি এর ছোট একটি সংস্করণ। এখানে সবকিছু খুবই ছোট আকারে থাকবে। যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, যোগাযোগের ঠিকানা এবং চাকুরির সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো বিস্তরিত না লিখে স্বল্প কথায় থাকবে। একটা ভাল রিজুমি ১ পৃষ্ঠার বেশি হওয়া উচিত নয়।

বাংলাদেশ, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা কোথায় কোনটা চলে

বাংলাদেশ

বাংলাদেশে আইটি ক্ষেত্রের জব বাদে বাকিযায়গাগুলোতে সিভির কথা লেখা থাকলেও মুলত বায়োডাটাই চেয়ে বসে। কার হাতের আঙ্গুল মতটুকু পারলে এটার সাইজও এড করে দিতে হয় এগুলা সিভি না।

আইটি জবগুলোতে প্রপার সিভির প্রচুর দাম রয়েছে বাংলাদেশে কিন্তু বেশিভাগ সিভিই আমার পছন্দ হয়নি। কেউ কেউ খুব ফ্যান্সি করে ফেলে আবার কেউ কেউ পড়ার উপযোগী সিভি বানাতে পারে না। অনেকে আবার ফ্রেসার জবে হাবাজাবি দিয়ে ৩-৪ পেজের সিভি দিয়ে দেয়। বাংলাদেশে সরকারেরও কোন ধরাবাধা নিয়ম নেই এগুলো নিয়ে।

ইউরোপ

ইউরোপের কথা বললে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কথাি বলতে হয়। এখানে সিভির চল আমার কাছে সঠিক মনেহয়। এখানে পাঠ্যপযোগী সিভিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। জার্মানিসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে Dual Column Tabular Format CV প্রচুর চলে। এদিকে কোন চাকরিতে আবেদন করলে এ ধরনের সিভি বানানো উচিত।

কানাডা

কানাডাতে রিজুমির চল সবথেকে বেশি। এদের নিয়ম অনুযায়ী আমি যতদুর জানি রিজুমিতে কোন ছবি দেয়া নিশেধ। কারও চেহারা, গায়ের রং যেন কোন ভুমিকা না রাখে সেজন্য ব্যাক্তিগত তথ্য সংক্ষেপ করে শুধু পেশা সম্পর্কিত তথ্য রিজুমিতে যুক্ত করতে হয়। অন্যন্য দেশে রিজুমিতে ছবি যুক্ত করার চল থাকলেও কানাডাতে তা স্বাভাবিক নয়।

নিজের সিভি কেন নিজেই ডেভলপ উচিত

একটি সিভি আসলে প্রতিনিয়ত ডেভলপ করার জিনিস। আপনি প্রতিনিয়ত নতুন অভিজ্ঞতার সম্মূখীন হবেন নতুন কিছু শিখবেন এবং সিভিকে সেভাবে উন্নত করতে থাকবেন। আমি নিজের ৪-৫ বছর আগের সিভি দেখলে চমকে উঠি যে তখন কি উল্টাপাল্টা লিখেছি। এটাই বাস্তবতা যে সময়ের সাথে আমার সিভি তৈরির দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে এবং আমি সেভাবে সিভিকে গতাতুগতিক করবো। সুন্দর পরিপাটি সিভি বানাতে পারা একটা দক্ষতা যা অন্য কাউকে দিয়ে বানালে ভবিষৎতে আবার আরেকজনকে ধরতে হবে এবং যে জিনিসটা চাকরি পাবার জন্য এতটা গুরুত্বপূর্ন সেটা অন্য কেউ আপনার মত গুরুত্ব দিয়ে দেখবে না। সিভিতে একটা বানান ভুল আপনার ইন্টারভিউতে ডাক না পাবার কারন হতে পারে। আমি যখন রিক্রুটমেন্টের দায়িত্বে ছিলাম তখন ত্রুটিপূর্ন সিভি দায়িত্বহীনতার অংশ হিসেবেই ধরতাম।

চাপাবাজি করেছেন তো মরেছেন

সিভিতে ভুলেও নিজের সম্পর্কে বাড়িয়ে বলবেন না, যেগুলো নিয়ে কোন ধারনা নেই সেগুলো লিখতে যাবেন না। মনে রাখবেন আপনি যা যা লিখবেন ঠিক সেগুলো নিয়েই প্রশ্ন করে ইন্টারভিউয়ার, যদি কোনভাবে সে বুঝে যায় আপনি না জেনেও লিখেছেন তাহলে হয়তো ইন্টারভিউ আর সাফল্যের মুখ দেখবে না। একটা অবিস্বাস চলে আসবে আপনার উপরে।

যে সেকশনগুলো থাকা উচিত একটা সিভিতে (অর্ডারসহ)

  • Personal data (Name, picture and contact details)
  • Objective
  • Experience
  • Skill with language skill (with self assessment if possible)
  • Educational Qualification
  • Training
  • Profile and links

নীচে প্রতিটি সেকশন সম্পর্কে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করছি।

Personal data

ব্যাক্তিগত তথ্য খুব বেশি দেয়া যাবে না, নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা আর আংশিক বসবাসের ঠিকানা।

Objective

এই যায়গাটাতে ছোট একটা প্যারা লিখতে হবে যেখানে আপনি কেমন এবং কি ধরনের পজিশনে কাজ করতে চান তা লিখবেন। এই প্যারাটি অবশ্যই সংক্ষেপ হতে হবে। এই এক দু লাইন ডেভলপ করতে আসলে অনেক সময় লেগে যায়, গুগল করে আইডিয়া নিয়ে নিজের জন্য বেস্ট অবজেক্টিভ ডেভলপ করতে হবে। সিভি স্ক্রীনিং এর সময় অবজেক্টিভ খুবই গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।

Experience

এক্সপেরিয়েন্স একটা গুরুত্বপূর্ন সেকশন। এখানে আপনার পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতাগুলো লিখুন, কম্পানির নাম, পদবী, ব্যাপ্তি এবং খুবই ভাল হয় যদি ওখানে আপনার দায়িত্বগুলো সম্পর্কে ছোট একটা প্যারা লিখেন। আপনার জন্য কম্পানির কি কি উন্নতি হয়েছে সেগুলোও উল্লেখ করুন।

Skill

খুবই গুরুত্বপূর্ন এই সেকশনে আপনার দক্ষতার আইটেমগুলো লিখুন, টেবিলে শ্রেণীবিন্যাস করে কিছুটা এ্যাসেসমেন্ট করে লিখলে ভাল ফলাফল আনবে। সবসময় গুরুত্বপূর্ন এবং জব সম্পর্কিত স্কিলগুলো প্রথমদিকে এবং কম গুরুত্বপূর্নগুলো পরের দিকে লিখুন। আমার নিজের সিভিতে আমি আমার স্কিলগুলোকে সাজিয়েছি নীচের ছবির মত করে।

Educational Qualification

শিক্ষাগত যোগ্যতা অনেকে প্রথমে দেয়। এটা ঠিক না, প্রথমে অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতাকেই রাখা উচিত। যদি কোন প্রকার চাকুরির অভিজ্ঞতা নাও থাকে তাহলে বিভিন্ন পেট প্রজেক্ট, ভার্সিটির প্রজেক্ট এগুলো উল্লেখ করা উচিত। শিক্ষাগত যোগ্যতার সেকশনে SSC, HSC এগুলো দেয়ার কোন প্রয়োজন নাই শুধু গ্রাজুয়েশন এবং তার পরবর্তী ডিগ্রীগুলোই রাখা উচিৎ।

Training

এই সেকশনে বিভিন্ন ট্রেনিং এ অংশ নিয়ে থাকলে সেগুলো সম্পর্কে তথ্য সংযুক্ত করুন। স্ক্রাম, ম্যানেজমেন্ট, হ্যাকাথন এ ধরনের ট্রেনিং এর তথ্যগুলো এখানে সংযুক্ত করতে পারেন।

Profile and links

এটা একটা গুরুত্বপূর্ন সেকশন। এখানে আপনার Stackoverflow, LinkedIn, Portfolio Site, Personal Blog ইত্যাদির লিংকগুলো। ইন্টারভিউয়াররা সিভি পছন্দ হলে ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে এক্টিভিটি/প্রফাইল চেক করে থাকেন প্রায়ই।

Bad Practice

  • একাধিক কালার ব্যাবহার করে রংচঙ্গা সিভি বানানো যাবে না।
  • খুব বেশি ইনফরমেশন দেয়া যাবে না, অল্পকথায় সবকিছু শেষ করতে হবে।
  • রেফারেন্স ব্যাবহারের দরকার নাই।
  • পুরো সিভি ২ পৃষ্ঠার বেশী কখনোই না।
  • ফন্ট সাইজ খুব ছোট করা যাবে না 11pt ভাল একটা সাইজ, এর এক সাইজ বেশি করা যেতে পারে তবে কম কখনোই নয়

আমার কাছে বিভিন্ন টপিক নিয়ে লেখার জন্য অনুরোধ করতে পারেন। এজন্য আমাকে মেইল করুন asif.saho{at}gmail.com ঠিকানায়। আর লেখাটি যদি আপনার পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে পারেন। হয়তো আপনার মত অনেকেরই কাজে লাগতে পারে।

কৃতজ্ঞতা

থাম্বনেইলে থাকা ছবিটি এখানে থেকে নেয়া।