একটা সময় ছিল যখন লোকজন “হুজুগে বাঙালি” কথাটার বারবার প্রমান করার জন্য HSC শেষ করে নগদে CSE তে ভর্তি হয়ে যেত। তারপর একজন এই হুজুগটা গিয়ে পরলো EEE এর উপরে। ফাইনালি এখনো আমরা এই হুজুগটা প্রমান করেই চলেছি গনহারে CSE তে ভর্তি হয়ে। সবকিছু ভার্সিটির পড়াশুনা থেকে হয় না এটা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে খুবই প্রমানিত। আমি দামী কোন ভার্সিটির ছাত্র ছিলাম না, বলতে গেলে নিম্বসারির একটা ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলাম। আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম ইউনিভার্সিটি আমাকে তেমন কিছু দিতে পারবে না, যা করার আমাকেই করতে হবে। আমার নিজেরও অনেক ভুলভ্রান্তি ছিল যা আজকের লেখায় উল্লেখ করার চেষ্টা করবো।
কোন ভার্সিটিতে ভর্তি হবো
ছোট ভাইকে ভর্তি করানোর জন্য কিছুদিন পরিবারের সাথে কথা হচ্ছিল। আমার ছোটভাই খুব উঁচুদরের ছাত্র না যে সে বুয়েট/রুয়েটে চান্স পেয়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়টা মাথায় রেখেছিলাম আমরা। সরকারী ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির বিষয়টা আমি এড়িয়ে গেলাম কারন এটা নিয়ে আমার ধারনা খুবই কম। আমি কোনখানে এডমিশন পরীক্ষা পর্যন্ত দেই নাই। এটা না দিতে আমি উৎসাহ দিচ্ছি না কিন্তু আমার পেক্ষাপটটা ভিন্ন ছিল। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এক শ্রেনী রয়েছে যারা একপ্রকার সার্টিফিকেট বিক্রি করছে। এখানে পরাশুনার আসলে তেমন কোন দরকার নাই। এখানে যায় তারাই যাদের প্রমোশনের জন্য একটা ডিগ্রী দরকার বা মামা/খালু বলেছেন একটা ডিগ্রী এনে দিলে চাকরি দিয়ে দিবে। উল্লেখ্য আপনি এরকম একটা যায়গাতেও ভর্তি হতে পারেন কিন্তু পাশ করে সফলতার পথ কিন্তু আপনার সামনে কঠিন হয়ে যাবে। পরে কিন্তু আপনাকে প্রোগ্রামিং, প্রবলেম সলভিং এগুলা নিজে থেকে শিখতে হবে নাহলে কোনই কাজে আসবে না আপনার ডিগ্রী। টাকা দিয়েই যখন পড়বেন তখন এমন একটা যায়গা থেকে পড়ুন যেখানে এ জিনিসগুলো শেখার পরিবেশ পাবেন।
ভাল ভার্সিটি নির্বাচন করার জন্য একটামাত্র জিনিস আমি সবথেকে উপরে রাখবো সেটা হল ফ্যাকাল্টি। যেখানে ভাল শিক্ষক আছেন সেখানে ভাল শেখার সুযোগ আছে। এরপর সামর্থ অনুযায়ী যেখানে সুবিধা হয় ভর্তি হয়ে যান।
কম্পিউটার প্রোগ্রামার হতে কিভাবে পড়াশুনা করবো?
আমার নিজের ছাত্রজীবনে দেখেছি বড় বড় সব গনিতবিদ যাদের থেকে সাহায্য নিয়ে গনিতে পাশমার্ক ঠেকাতে হত কিন্তু তারপরও তারা ভাল প্রোগ্রামার হতে পারে নাই কারন হল ফোকাস। আমি গনিতে কাঁচা হলেও দু চারটা কোড লিখে দিন চলে যাচ্ছে। সবথেকে বড় জিনিসটা হল ফোকাস করা। একটা কথা প্রচলিত আছে যে “জ্ঞান অর্জনের কোন সর্টকাট নাই” কথাটা সত্য। টার্গেট রাখুন প্রোগ্রামার হওয়ার জন্য আর ফোকাস রাখুন প্রবলেম সলভিং এ সেটা গনিতে হোক আর প্রগ্রামিং ক্লাসে হোক। প্রগ্রামার হওয়ার জন্য নিজের চিন্তার ধরনা প্রথমে পরিবর্তন করা জরুরী। প্রথম দিকে মনে হবে প্রগ্রাম মিলাতে পারলেই বেচে গেলাম কিন্তু পরে যখন প্রফেশনাল লাইফে আসবেন তখন দেখবেন না এখানে Efficiency এর একটা মূল্য আছে। এই জিনিসটা যত তারাতারি অর্জন করা যাবে ততই ভাল। অনেক মানুষেরই OCD আছে, এটা নিয়ে মোটামুটি সবাই জানি। কম্পিউটার প্রোগ্রামারদেরও কিছু OCD আছে যেমন Code Alignment (এটা আমার মধ্যে তীব্র নিজেকে আমার Alignment Nazi মনেহয়) আরেকটা হল নিজের কোড নিজেরই পছন্দ না হওয়া, প্রথমদিকে যদিওবা পছণ্দ হল মাসখানেক পর দেখলে আর সহ্য হয় না। এই OCD গুলো খুবই ভাল জিনিস যেগুলো যত তারাতারি নিজের মধ্যে ইনস্টল করা যাবে ততই মঙ্গল।
ছাত্র লাইফে আমি একদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বলছিলাম ভার্সিটিতে C++ শেখাবে কেন, PHP শেখালেই পারে তাহলে তো আমার কাজের জন্য অনেক সুবিধা হত চাকরি পেতে কত এগিয়ে যেতাম। এই ভূলটা বুঝতে বুঝতে আমার জীবন থেকে দুটা বছর চলে যায় তখন বুঝতে পারি আমি কতটা সময় নষ্ট করেছি। প্রগ্রামিং শিখুন প্রগ্রামিং এর উপরে ফোকাস করে ল্যাঙ্গুয়েজ এর উপরে নয়। মানসিকতা এমন রাখা উচিত যেন যে কোন ল্যাঙ্গুয়েজে বসিয়ে দিলেই সমাধান করে দিতে পারেন। এখন নিশ্চই বলবেন প্রতিটা ল্যাঙ্গুয়েজেই তো কিছু ভিন্নতা থাকে সেটা তো শিখতেই হবে। হ্যা কথা সত্য, ল্যাঙ্গুয়েজকে আসলে একটা টুল হিসেবে নিলেই ভাল হয় কারন প্রফেশনাল লাইফে এত বেশি জিনিস শিখতে হবে প্রতিনিয়ত যে এই পেইনটা পেইন হিসেবে না নিয়ে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে নিলেই ভাল। তাই আমি কখনো C++ এ কোড করবো না এজন্য C++ শিখবো না এটা মাথায় না এনে শেখার কাজ চালাতে থাকুন। একটা ল্যাঙ্গুয়েজের দক্ষতা আরেকটা ল্যাঙ্গুয়েজে কাজে আসে যেটা প্রথমদিকে বুঝতে পারা যায় না।
নিজের মত লক্ষ্য আছে এমন বন্ধুবান্ধব যোগার করে পেয়ার প্রগ্রামিং করুন, প্রগ্রামিং প্রতিযোগীতাগুলোতে নিয়মিত অংশগ্রহন করুন, হ্যাকাথনে অংশ নিন। কিছু করতে পারেন বা না পারেন আশেপাশে ঘুরঘুর করুন। গ্রামে কিছু ডাক্টার দেখা যায় যারা একসময় কোন ডাক্টারের দোকানে পিয়ন ছিল অশিক্ষিত হলেও তার কাছে থেকে থেকে এখন নিজেই ডাক্টার বনে গেছে। হয়তো আসলেই ডাক্টার না, কিন্তু সে কিন্তু বেশকিছু জিনিস শিখে ফেলেছে। এজন্য এসব প্রতিযোগীতায় নিয়মিত থাকা নিজের মোটিভেশনের জন্য যেমন ভাল তেমনি অনেক জিনিস সহজে শেখা যায়, নিজের পরিচিতি বাড়ানো যায়। ভার্সিটিতে সব ফ্যাকাল্টি যে খুবই হেল্পফুল হবে এমনটা না তবে, এমন কিছু শিক্ষক আছেন যারা ক্লাসের বাইরেও হেল্প করতে খুবই আগ্রহী থাকেন। এদের শিষ্যত্ব গ্রহন করেন তাদের নলেজগুলো নিজের মাথায় নিয়মিত ট্রান্সফার করে নিন।
আমি প্রোগ্রামার হবো না, সার্ভার এডমিন/নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার/QA হবো, আমার Programming এত না শিখলেও চলবে
দুঃখিত ভাই চলবে না, দিনশেষে আপনার কাজতো কম্পিউটারের সাথেই ওকে বুঝিয়ে পরিয়েই তো কাজ করবেন নাকি? ওকে বুঝাতে গেলে সবখানেই দেখবেন একটা ল্যাঙ্গুয়েজ আছে যা দিয়ে প্রগ্রাম লিখতে হয়। QA হবেন? এর জন্যও Automated Test লিখতে হবে যদি না ভাঙ্গাচোরা কম্পানিতে বসে মাউস টিপে টিপে টেস্টিং এর চাকরি করতে চান।
অনেক চেষ্টা করি কিন্তু প্রগ্রাম মিলে না!
এইটা আসলে একটা সমস্যাই, আমিসহ সবাই এই সমস্যার মধ্যে ছিল তাদের সবারই সমাধান করতে হয়েছে বারবার অনুশীলন করে। আপনি জীবনের অর্ধেক পড়াশোনার পেছনে ব্যয় করে একটা ভাল চাকরি পাওয়ার জন্য আশা করেন আপনার ক্যারিয়ারটা মোটামুটি রেডি হয়ে আছে পাস করেই ঢুকে যাবেন তাহলে তো জিনিসটা সহজ হবে না নিশ্চই। পড়াশুনা একটা রেস এখানে সামনের দিকে এগিয়ে থাকতেই হবে। কম্পিউটার সাইন্সে পড়ার সবথেকে বড় সুবিধাটা হল আপনি দেরীতে পৌছালেও সমস্যা নেই শেষ তাতেও চলবে, রেজাল্ট যদি খারাপও হয় তাতেও সমস্যা কাভার করে ফেলতে পারবেন যদি আপনি উপযুক্ত জ্ঞানগুলি অর্জন করেন। CGPA খারাপ হয়ে গেছে জন্য চোখের পানি ফেলতে হবে না।
আমি এলগরিদমে খারাপ আমার দ্বারা হবে না!
সবাই সবিকছু পারবে এমনটা নয় যেমন আমি, আমার দ্বারাও এই জিনিসটা ভালমত অর্জন করা সম্বব হয় নাই জন্য এখনো কষ্ট পাই। দুটা কারনে এলগরিদমে খারাপ হতে পারেন। সময়মত গুরুত্ব দেন নাই অথবা আসলেই আপনার গতি ভাল না। এই জিনিসটা নিয়ে আসলে ছাত্রজীবনে এত চিন্তার কিছু নেই। সবাই যে এনক্রিপশন এলগরিদম লিখবে তা কিন্তু না আবার সবাই যে গুগলে চাকরি করবে তাও না। দক্ষতা অনুযায়ী সবার জন্যই ভাল চাকরির ব্যবস্থা আছে যদি না একবারে খারাপ করে বসেন। এটাই কম্পিউটার সাইন্সের সবথেকে বড় সুবিধা। বন্ধুরা যারা আগের Division থাকাকালীন সময়ে গ্রাজুয়েশন করছিল তাদের কাছে শুনেছি দ্বীতিয়শ্রেনী না পেলে চাকরি আর পেতে হবে না। সবখানেই নাকি উল্লেখ করে দেয় রেজাল্ট মিনিমাম দ্বীতিয়শ্রেনী থাকতে হবে। কিন্তু কম্পিউটার সাইন্সের জবগুলো দেখেন এখানে কোথাও কিন্তু CGPA উল্লেখ নাই কেউ সরকারী চাকরির রেফারেন্স দিয়েন না আবার আমি এখানে ডাটা এন্ট্রি বা তৈলাক্তামি করার চাকরির বিষয়ে কথা বলছি না। চেষ্টা করতে হবে যতটা নিজেকে এগিয়ে নেয়া যায়।
ত্রিকোনমিতি/জ্যামিতি/ম্যাট্রিক্স এগুলা করে কি হবে?
প্রশ্নটা আসলে এককালে আমারই ছিল। এগুলা করে আসলেই কি হবে। কিন্তু এখন ভাবি কেউ যদি একবার বলতো ত্রিকোনমিতি জানলে 3D Dynamic গ্রাফিক্স বানানো যাবে এবং প্রগ্রাম করে সেটা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যাবে তাহলে হয়তো SSC তে এই চ্যাপ্টারটা আরেকটু মনযোগ দিতে পরতাম এবং কিছুদিন আগে অফিসের এপ্লিকেশনের প্রিলোডারটাতে একটা থ্রিডি ইফেক্ট দিয়ে বসের আরেকটু আস্থাভাজন হতে পারতাম। জ্যামিতির দারুন দারুন প্রয়োগ আছে যেগুলো প্রফেশনাল লাইফের প্রথমদিকে চোখে না পরলেও পরে প্রয়োজন হবে।
ম্যাট্রিক্স এর গানিতিক হিসাব দিয়ে দিয়ে যে একটা ছবিকে যে রোটেট করা হয় এটা জানলে হয়তো তখন মনযোগটা আরেকটা বেড়ে যেত। এগুলা কোনকিছুকেই অবহেলা করা যাবে না। দরকারে গুগল করে জেনে নিন কোন বিষয়টার কি গুরুত্ব রয়েছে।
এগুলো সবকিছুই যে একজনের মধ্যে থাকবে তা কিন্তু না, একেকজন একেকটাতে ভাল করবে যতটা পারা যায় ততটা নিজের আয়ত্বে আনার জন্য কাজ করতে হবে। এগুলো এমন কিছু বিশেষত্ব যেগুলো আপনার CV কে অন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলবে।
গুগল করতে শিখুন
এটা শুনতে খুবই সাধারন হলেও অনেকেই গুগলে তথ্য খুঁজে পেতে পটু না। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে ক্যারিয়ারের প্রতিটি পর্বেই গুগল করতে জানা একটা গুরুত্বপূর্ন স্কিল। গুগল আপনার সবথেকে ভাল বন্ধু। আজ যে সমস্যায় আপনি আটকে আছেন আপনার মত এই একই সমস্যা নিয়ে আরও অনেকেই ইন্টার্নেটের বিভিন্ন প্লাটফর্মে পোষ্ট করেছেন এবং আলোচনা করেছেন। যেকোন সমস্যায় গুগলকে জিজ্ঞাসা করুন সে আপনার প্রয়োজনীয়ত পোষ্ট/আলোচনা খুজে দিবে। যেকোন প্রশ্ন How to দিয়ে করুন বা কোন এরর মেসেজ লিখে সার্চ করুন বেশিভাগ ক্ষেত্রেই সমাধান পেয়ে যাবেন। কাউকে জিজ্ঞাসা করার আগে কিছুক্ষন খোজাখুজি করলে বেশিরভাগ সমাধান এভাবেই পাওয়া যায়। প্রথমদিকে ঠিকমত হয়তো তথ্য নাও পেতে পারেন কিন্তু ধীরে ধীরে আপনার উন্নতি হবে এবং ঠিক কিভাবে সার্চ করলে প্রয়োজনীয়ত জিনিস খুজে পাওয়া যায় বুঝতে পারবেন। কিওয়ার্ড পরিবর্তন করে করতে সার্চ করতে পারেন সঠিক ফলাফল পাওয়ার জন্য। দরকারে কিভাবে গুগল করতে হয় এটার জন্যও গুগলে সার্চ করুন। অনেক ভাল ভাল আর্টিকেল আছে এই বিষয়ে।
ব্লগ লিখুন, শেয়ার করুন, অন্যদের শেখান
বাংলাদেশে অনেক ভাল ভাল ইঞ্জিনিয়ার আছেন যাদেরকে কেউ চিনে না কিন্তু যারা লেখালেখিতে ভাল, নিজের জ্ঞান শেয়ার করেন তাদের চাকুরী প্রাপ্তিতে যেমন সুবিধা তেমনি শেখার গতি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। মানুষের উৎসাহ অনেক বড় একটা মোটিভেশন যেটা পাওয়া যায় ব্লগ লেখার মাধ্যমে। এজন্য একটা “Hello World!” প্রগ্রাম বানালেও তার বিস্তারিত শেয়ার করতে মানা নেই, আপনার এই ছোট জিনিসটাই হয়তো আরেকজনের কাজে লেগে যাবে পাশাপাশি আপনার উন্নতিতে সহায়ক হবে।
অনেকে চিন্তা করে আরেকজনকে বলে দিলে তো সে শিখে গেল আমার প্রতিযোগী বেড়ে গেল তাদের জন্য বলতে হয় কম্পউটার সাইন্স কোন সিক্রেট না যে বলে দিলে আপনার প্রতিযোগী বেড়ে যাবে। Internet এ সবথেকে বেশি যে তথ্যগুলো পাওয়া যায় তার মধ্যে Computer Science রিলেটেড জিনিস অনেক বেশি। সবার শেখার মাধ্যমই উন্মুক্ত আছে। আপনার লেখা দেখে কেউ যদি উৎসাহী হয় তাতে আপনার ক্ষতি নেই বাজারে চাকরি বাকরি এত কম পরে যায় নাই যে আপনার ভবিষৎ হুমকির মুখে পরবে। এখন তো ওয়েবে একটা ফ্রি ব্লগ খোলা কয়েকটা ক্লিকের ব্যাপার, আজ থেকেই শুরু হয়ে যাক না লেখালেখি।
ভার্সিটির শেষের বছর
ভার্সিটির শেষের বছর খুবই গুরুত্বপূর্ন কারন আর কিছুদিন পরই আপনার প্রফেশনাল জীবন শুরু হবে, এখন থেকেই তার প্রস্তুতি নিতে হবে। পড়াশোনা শেষে বেশিরভাগ মানুষই একটা হতাশার মধ্যে ডুবে যায় চাকরি বাকরির চিন্তায়। আমি এদিক দিয়ে অনেক ভাগ্যবান যে আমার মধ্যে এরকম হতাশার তিলমাত্রও ছিল না কারন আমি আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। আমার পরামর্শ থাকবে এ বিষয়টা আগেই মাথায় রাখতে নাহলে তখন পরিবাবের চাপ, গার্লফ্রেন্ডের চাপ (যদিও গার্লফ্রেন্ড জিনিসটা কম্পউটার ইঞ্জিনিয়ারদের লাইফে একটু বিরল তবে চিন্তার কিছুই নাই পরিস্থিতির পরিবর্তন আবশ্যক)। ইত্যাদিতে স্টাডি করাটা একটু সমস্যাই হয়ে দারাবে। এজন্য সময়মত প্রস্তুতি নিন। শেষ বছরে এসে মার্কেটে বহুল প্রচলিত টেকলোলজি কি দেখুন এবং নিজের অর্জিত দক্ষতাগুলোর সাথে মিলিয়ে একটা টার্গেট সেট করুন। আগে বলেছিলাম যে কোন ল্যাঙ্গুয়েজ স্পেসিফিক চিন্তা না করতে এবার চিন্তা করে ফেলুন কোন ল্যাঙ্গুয়েজ এবং ফ্রেমওয়ার্ক আপনার দক্ষতার সাথে যায় এবং বাজারে চাহিদাও ভাল এবং টাকাটুকাও ভাল।
এতদিনে নিশ্চই অনেক বড়ভাই শুভাকাঙ্খী এবং কমিউনিটি লিজেন্ডদের সাথে পরিচয় হয়ে গিয়েছে তাদের থেকে পরামর্শ নিন। আপনি ওয়েব ডেভলপার হবেন না মোবাইল এপস ডেভলপার হবেন সেটা চিন্তা করার উপযুক্ত সময় এখনই। যখন একটা সিদ্ধান্তে এসে যাবেন তখন ওটার উপরে পূর্ন ফোকাস করুন। বিভিন্ন ফান প্রজেক্ট বানান এবং গিটহাবে আপলোড করুন, সুন্দর করে ডকুমেন্টেশন লিখুন প্রফেশনালি উপস্থাপন করুন। মনে করুন এগুলো খুবই সিরিয়াস প্রজেক্ট। একসময় এগুলো সত্যিই সিরিয়াস প্রজেক্ট হিসেবে কাজে দিবে। একটা ইন্টার্ভিউতে যখন ইন্টার্ভিউয়াররা আপনার প্রজেক্ট রিভিউ করবে তখন আপনার প্রজেক্ট দেখে তারা ধরে নিবে ওটাই আপনার কাজের কোয়ালিটি, যত ভালমত এই ফান/পেট প্রজেক্টগুলো করবেন তত ভাল আউটপুট আপনার কাছে আসবে।
যদি উচ্চশিক্ষায় দেশের বাইরে যাওয়ার থাকে তাতেও কোন সমস্যা নেই দেশের বাইরে গেলে সবাই মোটামুটি নিজের খরচেই সবিকছু চালিয়ে নেয় এই বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলো তখন ভাল ফলাফল বয়ে আনবে।
জীবনের প্রথম জব
প্রতিটা পদক্ষেপই গুরুত্বপূর্ন কোনটাই ফেলনা না। একটা বিল্ডিং এর ভিত্তি যদি ভাল না হয় তাহলে সে বিল্ডিংটা বেশি বড় করা যাবে না তেমনি ক্যারিয়ারের জন্যও এই এমনই। শুরুর দিকে বেশি মনযোগী থাকতে হবে তাহলে ভবিষৎ এ বড় হওয়ার সুযোগটাও তত বেড়ে যাবে। অনেকে পারলে ভাল একটা কম্পানিতে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের চাকরির অফার পেলেও রাজি হয়ে যায়, চাকরি বলে কথা দ্রুত বিয়ে থা করে সেটল হতে পারলেই যেন লক্ষ্যপূরন হয়ে গেল। পরে দেখবেন বন্ধুরা গাড়ি হাঁকিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আপনার বেতন ওখানেই পরে আছে তখন একটা জাম্প দিতে কিন্তু অনেক সময় এবং পরিশ্রম যাবে, অনেকেই এই পর্যায়ে হতাশাকবলিত হয়ে পরে।
পারিবারিক চাপ থাকেই, ক্যারিয়ার পরিকল্পনা পারিবারিক চাপের বাইরে রাখতে পারলেই ভাল তাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। আমার পরামর্শ থাকবে প্রথম দিককার জবগুলোতে বেতনের দিকে না তাকিয়ে, কোন কম্পানিতে, কোন বসের অধীনে কি কাজের জন্য আপনি ঢুকছেন সেটাতে ফোকাস করা। স্রেফ একটা স্টার্টআপ কম্পানিতে বিনা বেতনেও দরকারে ঢুকে পরুন কোন সমস্যা নেই এটা যে ইনভেস্ট। আজকের ইনভেস্ট দ্রুত তুলে ফেলতে পারবেন। আমার নিজেরই প্রথম জবের বেতন ছিল মাত্র ৫,০০০ টাকা। পরের বেতনটা কিন্তু ৫০,০০০ এর কাছে। এক ধাক্কায় ১০ গুন বাড়িয়ে ফেলতে পেরেছিলাম। এখন মনেহয় তখন যদি জাম্পটা না দিয়ে আরও কিছুদিন ছোট বেতনে বড় কাজ কন্টিনিউ করতে পারতাম তাহলে জাম্পটা আরও ভালমত দিতে পারতাম।
চাকরির প্রথম দিকে দিনরাত গাধার মত খাটুন, যেকোন বিষয়ে কাজ করুন, ওয়েব ডেভলপার যদি হন তাহলে ফ্রন্ট এন্ড থেকে শুরু করে ব্যাকএন্ড, সার্ভার এডমিনিস্ট্রেশন সবকিছুই করার চেষ্টা করুন। পূর্নাঙ্গ ডেভলপার এগুলা সবকিছু সম্পর্কেই ধারনা রাখেন তাই কোন জ্ঞানই বিফলে যাবে ন। আরেকটা জিনিস মনে রাখা ভাল যখন বড় কোন কম্পানিতে জয়েন করবেন যাদের স্ট্যাবল কোন প্রডাক্ট আছে তারা কিন্তু আপনাকে আপনার দক্ষতার বাইরে কাজ করতে দিবে না তাদের প্রডাক্টের ক্ষতি হতে পারে দেখে, এটা আপনার শেখার জন্য একটা বাধা। এই বাধা আসার আগেই যা পারেন গোগ্রাসে গিলুন। মেস লাইফে যেমন কি রান্না হয়েছে এটা নিয়ে কেউ কথা না বলে খেয়ে নেয় সেরকম। যখন বড় কোথাও জয়েন করবেন তখন একটু রয়েসয়ে আগানোর সুযোগ পাবেন।
জব লাইফের শুরুর দিকের গুরুত্বপূর্ন কয়েকটি তত্ব
তত্ব ১: Boss is always right without an argument আপনি যতই সঠিক হন বস যা বলবে তাই। সম্পর্ক রাখুন সুদৃর, আপনার উদ্দেশ্য কোন ঝামেলায় জড়ানো না, সুকৌশলে বসের মাথা থেকে তার জ্ঞানগুলো আপনার মাথায় ট্রান্সফার করা। আমাদের দেশে অফিসে অনেক রাজনীতি চলে এগুলা করার যথেষ্ট সময় পাবেন পরে এখন কাজ হল ক্যারিয়ারের জন্য যতটা সম্ভব দক্ষতা অর্জন করা।
তত্ব ২: Always Create a backup copy: উবুন্তু/লিনাক্স ডিস্ট্রো সেটআপ দিতে গিয়ে আমরা ডাটাপত্র হারাই নাই এরকম মানুষ কমই আছি। যেহেতু চাকরির প্রথম দিকেও দক্ষতা বেশি আহরন করা হয় নাই তাই সবসময় ডাটা ব্যাকাপ রাখার প্রতি সিরিয়াস থাকতে হবে। কখনোই যেন কোন ডাটা না হারিয়ে যায়। হারিয়ে গেলেও যেন তা উদ্ধার করার আলাদা কোন সোর্স থাকে। হঠাৎ করে একটা সার্ভার ইন্সট্যান্স হারিয়ে গেলেও যেন কেউ টের পাবার আগেই উদ্ধার করা যায় তার ব্যাবস্থা যেন থাকে।
তত্ব ৩: যেখানেই সমস্যা সেখানেই প্রতিযোগীতা করে সমাধান করুন। এ ধরনের মানুষদের কম্পানি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখে। আমি যখন Sekailab (বর্তমানে Monstarlab) এ কর্মরত ছিলাম সেখানে এই কালচারটা খুবই দারুন ছিল, কারও সমস্যা হলে সবাই হুমরি খেয়ে সমাধানে ব্যস্ত হয়ে পরতো। এতে নিজের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়তে থাকে যা ইন্টার্ভিউ পারফর্মেন্স বাড়াতে প্রচুর সাহায্য করে।
তত্ব ৪: Use Command Line Interface (CLI): আজ হোক কাল হোক এই কালো স্ক্রীনে গুতোগুতি করতেই হবে তাই প্রথম থেকেই এটা ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। অনেকে Git এর জন্য Graphical Interface (GUI) ব্যবহার করে, আমি পুরোপুরি দ্বিমত এ ব্যাপারে। GUI ব্যবহার সবাই করতে পারে আপনার কমান্ড লাইনের ব্যবহার আপনাকে আলাদা করবে সবার থেকে। ফ্লো জানা থাকলে যেকোন GUI থেকে আপনি কাজ করতে পারবেন কিন্তু, GUI সবখানে পাবেন না তাই CLI ইউজ করার অভিজ্ঞতা থাকা আপনার CV তে একটা আলাদা মাত্রা এনে দিবে।
তত্ব ৫: গুগলে সমস্যা লিখে সার্চ দিলেই নিশ্চই Stackoverflow এর শতশত লিংক পাচ্ছেন। এগুলো কিন্তু আপানর মতই কেউ সমাধান দিয়েছে। নিজেও চেষ্টা করুন সমাধান দেবার। এই ফোরামে রেপুটেশন থাকা মানে আপনার CV তে আরেকটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।
তত্ব ৬: দেশে এবং দেশের বাইরের জবগুলোর রিকোয়ারমেন্টগুলো দেখুন নিয়মিত, নিজেকে ঝালিয়ে নিন এবং আপডেট করুন নিয়মিত সেভাবে স্কিলগুলো অর্জন করতে থাকুন, এই পেশায় প্রতিনিয়ত নিজেকে Up to date রাখতে হয় নাহলে বেতন যেমন বারবে না তেমনি ভবিষৎ ঝুঁকিতে পরবে।
তত্ব ৭: CV ডেভলপ করুন, এটি একটি প্রতিনিয়ত করার মত কাজ। মাসে একবার নিজের CV নিজেই পরুন, ভাষা ঠিক করুন নতুন স্কিল থাকলে এড করুন যেন কোথাও সাবমিট করার দরকার হলে তারাহুরোতে ভুল কিছু সাবমিট করা না হয়।
আজ এপর্যন্তই, পোষ্টটি কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাতে পারেন, যদি কোন বিষয় বাদ পরে যায় তাহলে জানান আমি পোষ্ট আপডেট করে দিবো ইনশা-আল্লাহ!